প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মতবিনিময় চলছিল। এ সময় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন তার বক্তব্যে টেনে আনেন বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রাতের ভোটের প্রসঙ্গ। আর এতেই চটে যান আওয়ামী লীগ দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী। সভায় শুরু হয় হট্টগোল। গতকাল কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথি সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা শুরু হয়। সভায় প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রত্যাশার কথা শোনেন তিনি। সভায় মেয়র প্রার্থীরা একে একে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘দল ত্যাগ করে প্রার্থী হয়েছি। ভোটের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা আছে।
ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত।
তিনি নির্বাচনের দিন ভোটারদের যাতায়াতের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করার কথা বলেন। বলেন, ‘পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা (আওয়ামী লীগ) ওয়াদা করছি, কারও মাইক ও পোস্টারে হাত দেয়া হবে না। কিন্তু ওরা (বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থী) গণ্ডগোল করে আমাদের ওপর দায় চাপাতে পারে। নির্বাচনে টাকার বাণিজ্য আছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা আছেন। এগুলোর ওপর নজরদারি থাকতে হবে।’ সভায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী গোলাম কিবরিয়া অভিযোগ করেন, তার ওয়ার্ডে কোতোয়ালি মডেল থানার উজ্জ্বল নামের এক উপ-পরিদর্শক তার সমর্থকদের তালিকা করছেন, হয়রানি করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহযোগিতা করছেন।
একই অভিযোগ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোশারফ হোসেনেরও। সেখানেও পুলিশ সমর্থকদের তালিকা করে মামলা দেয়ার পাঁয়তারা করছে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হানিফ মাহমুদ বলেন, আমার ওয়ার্ডে টাকা দিয়ে ভোট কেনা হচ্ছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী নাহিদা আক্তার বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে ১০০ থেকে ১৫০ জন সমর্থক নিয়ে গণসংযোগ করছেন। আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। নির্বাচনে লাঠিসোটা কিংবা পেশিশক্তির ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কুমিল্লায় আমরা একটি মডেল নির্বাচন করতে চাই। সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এখানে ভোট হবে ইভিএমে। সুতরাং পেশিশক্তির ব্যবহার করে কোনো লাভ হবে না। ভোট কেন্দ্রে কিংবা বাইরে পেশিশক্তি ব্যবহার করলে নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা রয়েছে তা ব্যবহার হবে।
ইভিএম নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, ভোটারকে চিহ্নিত করে মনিটরে দেখা হবে। যদি কারও আঙ্গুলের ছাপ নাও মিলে তার ভোটার নম্বর দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি ভোট দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভোটারকে অবশ্যই ভোটার আইডি বা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্বাচনে কেউ কূটকৌশলের আশ্রয় নিবেন না। এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করবো। কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গ, পেশিশক্তির ব্যবহার কিংবা হুমকি-ধমকির অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেটা নির্বাচনের আগে হোক কিংবা পরে হোক কোনো প্রকার অভিযোগের প্রমাণ পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ভোট হবে ইভিএমে। এক্ষেত্রে জাল ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভোটার যদি কেন্দ্রে উপস্থিত হন, তিনি ভোট দিয়েই যেতে পারবেন। ইভিএমে ভোট নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই; একের ভোট অন্যের কাছে চলে যাওয়ারও সুযোগ নেই। কোনো কারণে যদি ইভিএমে ভোটগ্রহণ স্লো হয়ে যায়, সমস্যা নেই। ভোটার উপস্থিত থাকলে প্রয়োজনে রাত ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। তবে জোর করে ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে যাবেন না। কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী, কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, কুমিল্লা অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. দুলাল তালুকদার।