1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
শ্রীলঙ্কায় ক্ষোভের আগুন কেন জাদুঘরে - Pundro TV
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৪২ অপরাহ্ন



শ্রীলঙ্কায় ক্ষোভের আগুন কেন জাদুঘরে

পুন্ড্র.টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ সোমবার, ১৬ মে, ২০২২

শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ–সহিংসতার মধ্যে প্রাণহানির তুলনায় বিষয়টি সাদামাটা মনে হতে পারে। কিন্তু জাদুঘরে হামলার প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে।
রাজাপক্ষে জাদুঘরটি দেশটির দক্ষিণাঞ্চল হাম্বানটোটায় অবস্থিত। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপক্ষে ও প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হওয়া তাঁর ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষের পৈতৃক বাড়ি এখানে। এই অঞ্চলে তাঁদের শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। হামলার শিকার জাদুঘরটি উৎসর্গ করা হয়েছিল রাজাপক্ষেদের মা–বাবাকে। সেখানে প্রয়াত ডন অলউইন রাজাপক্ষে ও তাঁর স্ত্রী ডানডিনার আলোকচিত্র, মোমের মূর্তি রাখা হয়েছিল।

প্রদর্শন করা হচ্ছিল তাঁদের ব্যবহৃত পোশাক, গৃহস্থালি সরঞ্জাম ও হাতে লেখা চিঠি।
গত সোমবার বিক্ষোভকারীরা এখানে হামলা চালিয়ে সেসব মোমের মূর্তি ভেঙে ফেলেন। ভবনটিকে আবর্জনায় পরিণত করেন। তাঁদের এ ক্ষোভ দেখে মনে হয়েছে, রাজাপক্ষের পরিবারের ওপর যতটা ক্ষোভ রয়েছে, যেন তার চেয়ে বেশি ক্ষোভ ঝেড়েছেন তাঁরা।

মেদা মুলানা গ্রামের জাদুঘরটি কথিত দুর্নীতির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। ২০১৪ সালে এটি চালু হয়। তখন মাহিন্দা ছিলেন প্রেসিডেন্ট আর গোতাবায়া ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

গোতাবায়া রাষ্ট্রীয় তহবিল ব্যবহার করে ব্যক্তিগত জমিতে এটি নির্মাণ করেছিলেন। শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীকে এই জাদুঘর নির্মাণকাজের জন্য জনবল সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর গোতাবায়ার নিজস্ব দপ্তর প্রতিরক্ষা এবং নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয় জাদুঘরের নকশা ও প্রাথমিক অন্যান্য কাজের প্রস্তুতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
কিন্তু গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা ২০১৫ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর সরকারি তহবিল ব্যয় নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। সে সময় গোতাবায়া ভুল কিছু করেননি বলে দাবি করেন। বলেন, এই জাদুঘরে সরকারি তহবিল থেকে ছয় কোটি শ্রীলঙ্কার রুপি ব্যবহার করা হয়েছে। পরে এর কিছু তিনি ফেরত দিয়েছিলেন। তবে মাহিন্দাকে এই তদন্তে জড়ানো হয়নি।

গোতাবায়া রাজাপক্ষে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আইন করে প্রেসিডেন্টের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন। তাতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খারিজ হয়ে যায়।

মাহিন্দা রাজাপক্ষে যখন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সে সময় বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিল টাইগারদের বিরুদ্ধে জয় অনেকটা অসম্ভব মনে হচ্ছিল অনেকের কাছে। কিন্তু মাহিন্দা ও তাঁর ছোট ভাই গোতাবায়া রাজাপক্ষে ২০০৯ সালে ২৫ বছরের দীর্ঘ এই যুদ্ধের অবসান ঘটান। তাঁদের কঠোর দমন অভিযানের মুখে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিলেন তামিল টাইগাররা। এরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি শ্রীলঙ্কানদের কাছে এই দুই ভাই নায়কে পরিণত হন।

ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মে, এই পরিবারই দেশের রাজা, যারা দ্বীপরাষ্ট্রটিকে সন্ত্রাসবাদের কবল থেকে মুক্ত করেছে। কিন্তু তাদের শাসনকালে লাগামহীন রাষ্ট্রীয় ব্যয় রাজাপক্ষেদের জনপ্রিয়তায় ভাটা নিয়ে আসে।

হাম্বানটোটায় ওই জাদুঘরের কাছের টাঙ্গালে বালিকুদাওয়াতে বসবাসকারী ৬২ বছর বয়সী বি এম নন্দাওয়াথি বলেন, ‘এই নেতারা ৩০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে সন্ত্রাসবাদ থেকে আমাদের বাঁচিয়েছে। আমরা এ জন্য তাদের সম্মান করি। কিন্তু সেটা এখন অর্থহীন। তারা আমাদের লুট করেছে। তারা পুরো দেশ বিক্রি করে দিয়েছে। তাদের মা–বাবার শারং ও ব্লাউজ প্রদর্শনের জন্য আমাদের লাখ লাখ টাকা খরচ করে একটি জাদুঘর তৈরি করেছে। আমাদের দেশের প্রতিটি ডলার তারা ডাকাতি করেছে।

হাম্বানটোটার ৩৭ বছর বয়সী ডিক্সন বিক্রমাচ্চির কণ্ঠেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর তারা জনগণের অর্থে তৈরি করেছে, নিজেদের উপার্জনে নয়। দেশের মানুষ যখন দিনে একবেলার খাবার জোগাতে পারছে না, তখন তারা দামি দামি পোশাক ও জুতা পরে বিলাসী জীবন যাপন করছে।’

করোনা মহামারির অভিঘাত, পর্যটনশিল্প ও রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস ছাড়া সরকারি অব্যবস্থাপনায় তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। রিজার্ভ–সংকটে শ্রীলঙ্কার আমদানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেশটিতে দেখা দিয়েছে খাবার, ওষুধ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট। নিত্যপণ্যের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।

এর প্রতিবাদে শ্রীলঙ্কায় সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ চলছিল। ৯ মে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে আনা হয়। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালানোয় দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। সেই সহিংসতার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন মাহিন্দা রাজাপক্ষে। বিক্ষোভকারীরা কলম্বোয় তাঁর সরকারি বাসভবনেও ঢুকে পড়েন।

একপর্যায়ে সেনা পাহারায় সেখান থেকে পরিবারসহ হেলিকপ্টারে করে একটি নৌঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। ওই দিনই হাম্বানটোটায় রাজাপক্ষের পৈতৃক বাড়ি এবং সরকারের মন্ত্রী–এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অর্ধশতাধিক বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ



© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST