1. shahajahanbabu@gmail.com : admin :
সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ স্বীকারের এক অনবদ্য গল্প - Pundro TV
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন



সন্তানের জন্য মায়ের ত্যাগ স্বীকারের এক অনবদ্য গল্প

পুন্ড্র.টিভি ডেস্ক
  • প্রকাশিতঃ রবিবার, ৮ মে, ২০২২
বিজ্ঞাপন

ক্যাম্পের কোচদের মুঠোফোন থেকে মায়ের সঙ্গে কথা বলতেন, ফিরে যেতে চাইতেন মায়ের কাছে রাজবাড়ীতে। ছেলেকে সান্ত্বনা দিতে আর নিজেও ছেলের মুখটা একনজর দেখতে সিমলা ইয়াসমিন চলে আসতেন ঢাকায়। মা–ছেলের সেই সাক্ষাৎ শেষ হতো মিরপুর ক্রীড়া পল্লীর গেটে সামিউলের কান্নায়।

মা তখনই বুঝতে পেরেছিলেন, ক্যাম্পে মন না টিকলে ছেলের বড় সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে না। আবার সিমলা ইয়াসমিনের জন্যও প্রতি সপ্তাহে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় ছেলেকে দেখতে আসা কঠিন ছিল। তাই খুঁজতে হলো অন্য পথ।

সামিউল যে ক্যাম্পে ছিলেন, সেই ক্যাম্পের মেয়ে সাঁতারুদের দেখাশোনা করার জন্য একজন আয়ার খোঁজ করছিল কর্তৃপক্ষ। সামিউলের মা নিয়ে নিলেন সেই চাকরিটাই। রাজবাড়ীতে সেলাইয়ের কাজের পাশাপাশি টিউশনি করাতেন। সেসব ছেড়ে একমাত্র সন্তানের কাছে থাকতে আয়ার চাকরি নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। ক্যাম্পে যাওয়া–আসা থাকায় তাঁকে চিনতেন ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। চাকরিটা পেতে তাই সমস্যা হয়নি সামিউলের মায়ের।

ঢাকায় সিমলা ইয়াসমিনের ঠিকানা হয় ক্রীড়া পল্লীর চতুর্থ তলায়। ভোরে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগপর্যন্ত মেয়ে সাঁতারুদের দেখাশোনার কাজ করতে হতো তাঁকে। তবে একই ভবনের তৃতীয় তলাতেই সামিউল থাকতেন। মা–ছেলের দূরত্বটা তাই কেটে গেল।

ক্যাম্পের মেয়েদের দেখাশোনা করার ফাঁকে সিমলা ইয়াসমিন চোখ রাখতেন ছেলের ওপর। ছেলে ঠিকভাবে খাচ্ছে কি না, অনুশীলনে যায় কি না—সব দিকেই ছিল নজর। ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে শুরু করে ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগপর্যন্ত এভাবেই ছেলেকে আগলে রাখেন তিনি। সে গল্প শোনাতে গিয়ে সিমলা ইয়াসমিন বলেন, ‘ছেলেটার যেমন আমাকে কাছে পাওয়া প্রয়োজন ছিল, আমারও ওর কাছে থাকতে মন টানত। ছেলেটা চোখের সামনে থাকায় আমার আর কোনো দুশ্চিন্তা ছিল না। ও–ই তো আমার একমাত্র সম্পদ!’

ক্যাম্পে মা–ছেলের বন্ধন খুব কাছে থেকে দেখেছেন দেশের অন্যতম সেরা নারী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন। ২০১৫ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে জোড়া সোনাজয়ী এই সাঁতারু বলছিলেন, ‘বেতন পেলেই আন্টি (সামিউলের মা) আমার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করতেন, “সামিউলকে কী খাওয়ালে ভালো হবে?” তবে ক্যাম্পের অন্য অল্প বয়সী সাঁতারুদের যেন এসব দেখে নিজেদের মা–বাবার কথা মনে পড়ে না যায়, সে জন্য কাজগুলো আড়ালেই করতেন তিনি। ক্যাম্পের মেয়েদের দেখাশোনাও উনি খুব ভালো করতেন।’

নৌবাহিনীর চুক্তিভিত্তিক চাকরির টাকা দিয়ে রাজবাড়ীতে মাকে ঘর বানিয়ে দিয়েছেন সামিউল। আসলে তাঁর সবকিছুই মাকে ঘিরে, এমনকি বড় সাঁতারু হওয়ার স্বপ্নটাও দেখেন মাকে খুশি করতেই, ‘আমার জন্য আমার মা অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁর জন্যই আমাকে ভালো সাঁতারু হতে হবে।’

ছেলের ভবিষ্যতের জন্য মা তো যা করার করেছেনই। এবার সামিউলের পালা মায়ের কষ্টটাকে সার্থক করে তোলার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ



© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০২২
Developed By ATOZ IT HOST