তার বদলে আরেক দফা লোডশেডিংয়ে শহরটি অন্ধকার হয়ে আছে, ঐতিহাসিক এলাকার বেশিরভাগই জনশূন্য; একাকী এক পর্যটককে দেখা গেল ফ্ল্যাশলাইট জ্বেলে কালো কুচকুচে রাস্তায় নিজের পথ খুঁজে নিতে।
কোভিডের আগে পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য হিসেবে গলের কদর বাড়ছিল; বৈশ্বিক মহামারী তাতে বাধ সাধলে ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ বিঘ্নিত হওয়া শুরু হল।
পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গল ফের পর্যটকে মুখর হয়ে উঠবে এমনটাই আশা ছিল খাত সংশ্লিষ্টদের; কিন্তু শ্রীলঙ্কা স্বাধীনতা পরবর্তী সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটে যতেই নিমজ্জিত হচ্ছে, ততই সে আশা ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের সংকটে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জর্জরিত দ্বীপদেশটির অসংখ্য নাগরিক রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিক্ষোভে মঙ্গলবার একজনের মৃত্যু হয়েছে, গত মাসে দেশটিতে বিক্ষোভ শুরুর পর এটাই প্রথম প্রাণহানি।
পর্যটন খাতে ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার আয় ছিল ৪৪০ কোটি ডলার; সেবছর জিডিপিতে পর্যটনের অবদানও ছিল ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ২০২০ সালে এটি নেমে আসে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশে।
দুই বছরের মধ্যে এ বছরের মার্চেই শ্রীলঙ্কায় পর্যটক এক লাখের ঘর অতিক্রম করেছিল বলে জানিয়েছে দেশটির পর্যটন কার্যালয়।
গত বছরের তুলনায় এ বছর যে অনেক অনেক গুণ বেশি পর্যটক আসবে তার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল; এর মাধ্যমে মহামারীর ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা যাবে বলে অনেকে আশাও করছিলেন।
“মানুষজন বিক্ষোভ করছে। রাস্তা বন্ধ। পর্যটকদের ভ্রমণ করা দরকার, সেজন্য তাদের জ্বালানি দরকার এবং তারা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না,” বলেছেন গলের একটি হোটেলে ফ্রন্ট অফিসের নির্বাহী হিসেবে কাজ করা সমিতা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য শ্রীলঙ্কা যখন ভারত, চীন, বিশ্বব্যাংকসহ একাধিক উৎসের কাছ থেকে তিনশ কোটি ডলারের মতো নিতে হিমশিম খাচ্ছে, তখনও গলের রেস্তোরাঁ ও হোটেল মালিকরা পর্যটন খাত আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং তারাও লাভের মুখ দেখবেন, এ ব্যাপারে ব্যাপক আশাবাদী।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কাটাতে শ্রীলঙ্কা এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি এক ঝড়ো বিকালে গলে অল্পকিছু পর্যটক যখন ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছিলেন, মনোরম রাস্তাগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, সেসময় নিজের সমস্যার কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন অ্যান্টিক দোকানের মালিক সেপালিকা আবেইসুন্দারা।
“বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কেবল আমারই নয়, সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই ভুগতে হচ্ছে। আমাদের দেশের অবস্থা দেখে আমার খুবেই কষ্ট হচ্ছে,” বলেছেন এ নারী।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/411267757051981