এক দল তরুণ, এদের বেশিরভাগ সদ্য কৈশোর পেরিয়েছে। তারা জানাল, তিন দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করেই তারা অস্ত্র হাতে লড়তে যাবে যুদ্ধের ময়দানে।
ম্যাকসিম লুৎসক, বয়স তার ১৯ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীববিজ্ঞানের ছাত্র। বলল, এই যুদ্ধে যেতে তার কোনো দ্বিধা নেই। পাঁচ বছর স্কাউটিং করেছে সে। শুধু রণকৌশলই নয়, অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও নিয়েছে সে।
৯ বছর যখন তার বয়স, তখন রাশিয়ার অভিযানে ক্রিমিয়া হারাতে দেখেছে সে।
ম্যাকসিমের সঙ্গে তার বন্ধু দিমিত্র কিসিলেঙ্কোও আছে। তার বয়স ১৮ বছর। সে পড়ছে অর্থনীতিতে, একই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এই যুদ্ধসেনাদের দেখে মনে হবে একটি বালকের দল। যারা ঠিক করছে যে তারা আর বালক থাকবে না। নিজেদের ভয় তাড়াতে কোনো কৌতূক শুনে সশব্দে হেসে ওঠার একটি দল যেন।
এদের কেউ কেউ হাঁটুতে প্যাড পরেছিল, যেটা আবার ছোট। দেখে মনে হচ্ছিল যেন নিজের দ্বাদশ জন্মদিনে স্কেটবোর্ড খেলতে এসেছে। কারও কারও কাছে ছিল স্লিপিং ব্যাগ একজনের কাছে ছিল ইয়োগা ম্যাট।
তারা দাঁড়িয়ে ছিল একটি বাসের সামনে। এই বাসটি তাদের নিয়ে যাবে প্রশিক্ষণ শিবিরে। মনে হচ্ছিল তারা কোনো পিকনিকে যাবে, হাতে ধরা অস্ত্রটির কথা বাদ দিলে। বলে রাখা ভালো, প্রত্যেকের সঙ্গে আছে একটি কালাশনিকভ রাইফেল।
দিমিত্র আর ম্যাকসিমসহ তাদের সঙ্গীদের অনুসরণ করে কদিন বাদে শহরের পূর্ব প্রান্তে তাদের প্রশিক্ষণ শিবিরে যাওয়ার পর দেখা গেল, তারা এখন পুরোপুরি সৈন্যদের পোশাকে। মাথায় হেলমেট, গায়ে বর্ম, হাঁটুতে প্যাড, সবই আছে।
কাঁপিয়ে দেওয়া শীতল বাতাস বইছিল, তার মধ্যে এই নবীন যোদ্ধাদের চলার পথ বেশ কঠিন করে তুলছিল ট্যাংক প্রতিরোধী স্টিলের পাত আর বালুর বস্তাগুলো। প্রাথমিক প্রশিক্ষণে শেখানো সবটুকু ব্যবহার করে এই বাধা পার হচ্ছিল তারা।
দিমিত্র বলল, “এই বন্দুক এখন আমার সঙ্গী হয়ে গেছে। আমি শিখেছি, কীভাবে গুলি ছুড়তে হয়, কীভাবে যুদ্ধ করতে হয়। আরও অনেক কিছু শিখেছি, রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যা কাজে দেবে।”
বলতে বলতে হেসে ফেলল সে, সে যা কল্পনা করছে, তা যে বাস্তবে কঠিন, সেটা ফুটে উঠল সেই হাসিতে।
ম্যাকসিমের দেখা গেল খুব তাড়া। খুব সিরিয়াস দেখাচ্ছিল তাকে, ভীষণ মনোযোগী ছাত্রের মতো।
“আমি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। কারণ অনেক কৌশল এখন আমার জানা। মার্শাল আর্ট, নানা ওষুধের ব্যবহার, যুদ্ধের ময়দানে তা কোন কোন কাজে লাগে, তার সবই জেনেছি,” বলল সে।
এরপর রসিকতাচ্ছলে বলল, সে দেখতে চায় রাশিয়ার ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু ক্রেমলিনে ইউক্রেইনের পতাকা উড়ছে।
তাদের সবার মনে প্রশ্ন একটাই, কিইভে কখন যুদ্ধ আসছে।
দিমিত্র বলল, “তাদের এখানে আটকে দিতে হবে আমাদের। কারণ যদি তারা কিইভে ঢুকে পড়তে পারে, তবে যুদ্ধের শেষই বলা যায়।”
তারা সবাই এসেছে রাশিয়া সীমান্তের ছোট একটি শহর থেকে, সেই শহরটি রুশ বিমান হামলায় ক্ষত-বিক্ষত।েআত্মীয়-পরিজনদের তারা রেখে এসেছে বিধ্স্ত সেই শহরে।
বাবা-মা কী ভাবছে তাদের- জানতে চাইলে ম্যাকসিম হাসতে হাসতে বলে, “মা বলেছে শেল্টারে থা্কতে, আর রান্নার কাজটি নিতে।”
আসলে কী করছে তা বাড়িতে জানায়নি ম্যাকসিম, কারণ তাদের উদ্বেগের মধ্যে রাখতে চায় না সে।
দিমিত্রর বাবা-মা অবশ্য জানে ছেলে কী করছে। মলোটভ ককটেইল বানানো শেখার পর বাবাকে সে বলেছিল যুদ্ধে যেতে চায়। তার বাবা তখন বলল, “যাও, তবে যুদ্ধক্ষেত্রে বেশি বীর সাজতে যেও না।”
“আমি যা করছি, তা নিয়ে আমার বাবা-মা গর্ব করেন,” বলল দিমিত্র, বলতে বলতে উজ্জ্বল হয়ে উঠল তার চোখ-মুখ।
ভয় লাগছে না- প্রশ্নে সেই উজ্জ্বলতা কমে যায় এই তরুণের।
বলল, “খুব বেশি না। তবে একটু ভয় পাওয়া তো স্বাভাবিক। মরতে তো কেউই চায় না, এমনকি দেশের জন্য হলেও। সুতরাং আমরা মরতে চাই না।”
যুদ্ধে নামলেও ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নও নিয়েও বিভোর ম্যাকসিম ও দিমিত্র; সেই স্বপ্ন বন্ধুদের সঙ্গে উদ্দাম আড্ডার, পড়াশোনা শেষ করার, ক্যারিয়ার গড়ার, পরিবারকে সুখী করার। আর তাদের পরিবারও প্রার্থনায় থাকছে, এই তরুণদের স্বপ্নগুলো যেন মরে না যায়।
https://www.facebook.com/pundrotvbd/videos/307272424804426