যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো সাবেক প্রেসিডেন্ট তাদের যোগাযোগ, সহযোগী ও প্রশাসন বিষয়ক কিছু তথ্য গোপন রাখতে পারেন। দেশটির সংবিধানে সাবেক প্রেসিডেন্টদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
শাসনতন্ত্রে এ সংক্রান্ত বিধান থাকার কারণে ইতোমধ্যে ট্রাম্পের অন্যতম সহযোগী স্টিভ ব্যানন দাঙ্গার তদন্তকারীদের সহযোগিতা করতে গড়িমসি করছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে তলব করেছিলেন তদন্ত কর্মকর্তারা, কিন্তু তাতে সাড়া দেননি তিনি।
এ ঘটনার জেরই বাইডেন প্রশাসন জানিয়েছে, ক্যাপিটল দাঙ্গা তদন্ত ইস্যুতে ট্রাম্পের বেলায় এই সুবিধা কার্যকর হবে না।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল আর্কাইভসে একটি চিঠি গিয়েছে হোয়াইট হাউস থেকে। তাতে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, কোনো নির্বাহীর ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার চাইতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ।’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে পরাজিত ট্রাম্প কখনও নির্বাচনের ফল মেনে নেননি। বরাবরই অভিযোগ করেছেন- নির্বাচনে কারচুপি ঘটেছে। সর্বশেষ নির্বাচন বাতিল ও পুনরায় ভোট গণনার জন্য আদালতের শরণাপন্নও হয়েছিলেন তিনি, যদিও আদালতের রায় তার বিপক্ষে গেছে।
গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে যখন যুক্তরষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেনকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য অধিবেশন শুরু হয়েছিল, সেসময় সেখানে হামলা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক শ’ উন্মত্ত সমর্থক। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন অন্তত ১৩ জন।
এ ঘটনার তদন্তে গঠিত কংগ্রেস কমিটি ওই দিনের ঘটনা সম্পর্কিত কিছু রেকর্ড চেয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে। কমিটির চাওয়া রেকর্ডগুলোর মধ্যে ট্রাম্পের যোগাযোগ, তার পরিবারের সদস্য, শীর্ষ সহযোগী, তার আইনজীবী ও তার প্রশাসনের সাবেক সদস্যদের তথ্যও অন্তর্ভূক্ত ছিল।
কিন্তু তদন্ত কমিটিকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক সুযোগের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন- দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি এসব তথ্য প্রদানে বাধ্য নন।
তদন্তকারী দলের সদস্যরা বলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই তদন্তে সহযোগিতা করতে গড়িমসি করছেন ব্যানন।
এদিকে, আগামী ২০২২ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের নির্বাচন হবে। এক সদস্য বিবিসিকে বলেন, ‘ব্যানন হয়তো ভাবছেন- আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থীরা জয়ী হবে। এ কারণেই অসহযোগিতা করছেন তিনি।’
তদন্ত দলের সদস্যরা জানিয়েছেন, ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনায় ট্রাম্পের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের চার সহযোগীকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদেরই একজন স্টিভ ব্যানন। বাকি তিন জন হলেন- ট্রাম্পের সাবেক চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডোস, ট্রাম্পের সাবেক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপক ড্যান স্ক্যাভিনো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী পেন্টাগনের সাবেক চিফ অব স্টাফ ক্যাশ প্যাটেল।
এক বিবৃতিতে তদন্ত দলে নেতা হাউস অব কমন্সের ডেমোক্র্যাট সদস্য বেনি থম্পসন ও রিপাবলিকান সদস্য লিজ চেনি জানিয়েছেন, মার্ক মেডোস এবং ক্যাশ প্যাটেল ইতোমধ্যে তদন্ত দলকে সহযোগিতা করেছেন।
ট্রাম্পের যেসব সহযোগী তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা করতে গড়িমসি করবেন- তাদেরকে কারাগারে যেতে হবে বলে ইতোমধ্যে হুঁশিয়ার করেছে তদন্ত কমিটি।